মার্কেটিং কাকে বলে, মার্কেটিং এর জনক কে ?এবং এর বৈশিষ্ট্য ।

আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ব্যবসায় এর আগমন ঘটছে। কিন্তু এই নতুন ব্যবসায়ীদের মার্কেটিং সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারনা না থাকায় তারা তাদের ব্যবসায় সফল হতে পারে না। তাদেরকে যদি সাধারণ একটি প্রশ্ন করা হয় যে “মার্কেটিং কি?” বা “মার্কেটিং বলতে কি জানেন? ” তাহলে তাদের কাছে থেকেও সেই মার্কেটিং এর নির্দারিত উত্তর পাওয়া যাবে না। পাওয়া যাবে খুবই সাধারণ উত্তর “যেখানে কোন কিছু কেনা বেচা হয় তাই মার্কেট” । আবার অন্যন কেউ বলবে” যেখানে ক্রেতা বা বিক্রেতা কোন কিছু বিনিময় করে তাকে মার্কেট বলে”। এরকম অনেক ধরনের সংজ্ঞা। আভিধানিক ভাবে হয়ত সংজ্ঞা গুলো মাঝে মাঝে ঠিক থাকে। কিন্তু প্রশ্নটি তো আভিধানিক উত্তরের জন্য না। একজন মার্কেটার হিসেবে উত্তর চাওয়া। তাহলে এখন প্রশ্ন আসতে পারে তারা ব্যবসা করছে কি ভাবে। তারা যে পণ্য নিয়ে বাজারে নেমে ছিল তা মার্কেটে না থাকার জন্য।

তো এখন মূল বিষয় হলো “মার্কেটিং কি?” এবং “মার্কেটিং কাকে বলে?”

মার্কেটিং এর “জনক ফিলিপ কটলার” মতে মার্কেটিং হচ্ছে ” মুনাফার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট বাজারের চাহিদা পূরণের জন্য বিজ্ঞান, শিল্পকলা এবং আবিষ্কারের মাধ্যমে পণ্য প্রদান করা।”

আরও সহজ ভাবে বলতে হলে প্রথমে মার্কেট মানে কি তা আমাদের জানতে হবে। মার্কেট মানে হচ্ছে বাজার। এটি কোনো সাধারণ কাচা বাজার বা কোনো শপিং মল নয়। মার্কেট মানে হচ্ছে ” একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের মানুষের মনের ভিতর স্থান” । মানুষের চিন্তা ভাবনাই হল একজন মার্কেটারের জন্য মার্কেট। আপনি যদি পণ্য বানাতে চান বা বাজারজাত (মার্কেটিং) করতে চান, তাহলে আপনাকে জানতে হবে মানুষ এই প্রোডাক্ট নিয়ে কি চিন্তা করে।আর মানুষের চিন্তা প্রভাবিত হয় তার পারিবারিক, সামাজিক,রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক অবস্থান দ্বারা । আপনি যদি না জানেন মানুষ কি চিন্তা করে তাহলে আপনি ভুল পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন। আর লোকসানের অংকটা বড় করবেন। এজন্য আপনি আপনার টার্গেট মার্কেটটি বাচাই করে তাদের মধ্যে থেকে ১০০জনের উপর একটা সার্ভে করতে পারেন বিভিন্ন প্রশ্ন দিয়ে। তাহলে আপনার একটা ধারনা তৈরি হবে আপনার পণ্যের মার্কেট সম্পর্কে ।

যে কোনো মার্কেটে আপনার পণ্যের অবস্থান নিশ্চিত করতে আপনাকে বিভিন্ন পন্থা গ্রহণ করতে হবে। এই পন্থাগুলো বিজ্ঞান ও কলার সমন্বয়ে করতে হবে। মার্কেট সম্পর্কে না জানার কারনে অনেক ভাল পণ্যও লোকসানের সম্পুখীন হয়। বিষয়টি যত না তাত্ত্বিক তার থেকে বেশি হল বাস্তবিক। মার্কেটে পণ্য মাকেটিং করার জন্য চার “পি” বা 4P নিয়ে কাজ করতে হয়। সেগুলো হল: “Product, Price, Promotion, Place” . এগুলোকে মার্কেটিং মিক্স বলে।

ব্যবসা শুরু করার আগে একজন ব্যবসায়ীকে দেখতে হয় তার পণ্য নিয়ে মানুষ কি ভাবে? মানুষের কি সেই পন্য দরকার আছে ? প্রয়োজন আছে এবং সেই প্রয়োজন মেটানোর জন্য কি মানুষ টাকা দিয়ে কিনতে রাজি আছে ? যদি প্রয়োজন থাকে আর টাকা দিয়ে কিনতে রাজি না থাকে তার মানে আপনার মার্কেট নেই। আবার এমনও হতে পারে প্রয়োজন আছে টাকা দিতে রাজি আছে কিন্ত কেনার সামর্থ নাই তাহলেও বুজবেন আপনার পণ্যের মার্কেট নেই। আর এই বিষয় গুলোই হল: ” Need, Want and Demand “.

মার্কেটিং সব ধরনের ব্যবসায়ের মূল বিষয় কাজ করে থাকে। এজন্য ব্যবসায় শুরু করার আগে অবশ্যই “মার্কেটিং কি” তা একজন ব্যবসায়িকে জানা প্রয়োজন।

মার্কেটিং এর জনক কে?

প্রিয় পাঠক, আপনার নিশ্চয়ই কখনো না কখনো মার্কেটিং শব্দটির শোনার পর এটা মাথায় এসেছে, মার্কেটিং এর জনক কে কি তার নাম? এ সম্পর্কে। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আপনার জন্য এর উত্তরটি হচ্ছে মার্কেটিং এর জনক ড. ফিলিক কোটলার। যিনি বিশ্ব বাণিজ্যে মার্কেটিং কে ভিন্নভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন অর্থাৎ সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে উপস্থাপন করেছেন। 

মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি?

বর্তমানে অনেক রকম মার্কেটিং পলিসি চালু হয়েছে তবে সাধারণত মার্কেটিং দুই প্রকার। যথা:

ট্রেডিশনাল মার্কেটিং

ডিজিটাল মার্কেটিং

ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কে আপনি সহজ ভাবে গতানুগতিক মার্কেটিংও বলতে পারেন। 

ট্রেডিশনাল মার্কেটিং

এই ধরনের মার্কেটিং তুলনামূলক সহজ ও সরল একটি প্রক্রিয়া। কেননা আপনি ট্রেডিশনাল এই শব্দটি শুনে স্বাভাবিকভাবেই বুঝে ফেলেছেন ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আর আমরা প্রত্যেকে প্রায় কমবেশি ট্রেডিশনাল মার্কেটিং সম্পর্কে অবগত। এই গতানুগতিক অর্থাৎ ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে সহজেই নিজের প্রোডাক্ট বা ব্র্যান্ডকে প্রচার-প্রচারণা করা সম্ভব হয় এবং সেটা বিক্রি করাটাও অনেকটাই সহজ হয়।

ডিজিটাল মার্কেটিং

বর্তমান যুগে পৃথিবীর মানুষের হাতের মুঠ হয়ে চলে এসেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র ইন্টারনেটের কারণে। কেননা এখন মানুষ ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার সুবিধা ঘরে বসে ভোগ করছে। আর এক্ষেত্রে বিজনেস প্রক্রিয়াটাও অনেক বেশি সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমান যুগে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েবসাইটও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার করা অ্যাড এ কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস এর সেবা সম্পর্কে অডিয়েন্সদের সামনে তুলে ধরা এবং কেনাবেচা করাটাই হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। অর্থাৎ ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে ডিজিটাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যবহার করে অনলাইনে কোন প্রোডাক্ট বা মার্কেটিং ক্যাম্পেইন্স পরিচালনা করা।

মার্কেটিং এর বৈশিষ্ট্য সমূহঃ

১. বিজ্ঞানের পাশাপাশি মার্কেটিংও একটি শিল্প : মার্কটিং অর্থনীতি থেকে বিকশিত হয়েছে তবে এটি সামাজিক এবং আচরণগত বিজ্ঞানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে। বিপণন বিজ্ঞানের স্রোতের পাশাপাশি মানবিক বিষয় এবং অর্থনীতি, আইন, মনোবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদির মতো বিষয়গুলির সাথে মার্কেটিং বিষয়টিও জড়িত।

২. মার্কেটিং এর সারমর্ম হ’ল এক্সচেঞ্জ : মার্কেটিং হয় বাণিজ্যিক বিনিময়কে ঘিরে। এর মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তি বিনিময়, তথ্য আদান প্রদান এবং ধারণাগুলির আদান প্রদান।

৩.মার্কেটিং হল লক্ষ্য ভিত্তিক : মার্কেটিংএর চূড়ান্ত লক্ষ্য গ্রাহকের সন্তুষ্টির লাভ মাধ্যমে অর্জন করা হয়।

৪. মার্কেটিং একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া: মার্কেটিং কোনও বিচ্ছিন্ন, স্থিতিশীল প্রক্রিয়া নয় বরং এটি একটি জটিল, ধারাবাহিক এবং আন্তঃসম্পর্কিত প্রক্রিয়া। মার্কেটিং এর মধ্যে অবিচ্ছিন্ন পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং নিয়ন্ত্রণ জড়িত। এটি পরিচালনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী ক্ষেত্র।

৫. মার্কেটিং হয় গ্রাহক ভিত্তিক : সমস্ত সংস্থাগুলি মানুষের চাহিদা এবং তাদের চাহিদা মেটাতে ব্যবসায় করা হয় । কারণ বিদ্যমান মার্কেটিং এর চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হ’ল গ্রাহক কী চান এবং কীভাবে ভোক্তার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা যায় তা সন্ধান করা। এটি গ্রাহকের প্রয়োজন অনুসারে পণ্য ও পরিষেবাদি উৎপাদন করতে পরিচালিত করা হয়।

৬. মার্কেটিং গ্রাহক দিয়ে শুরু হয় এবং ভোক্তার মাধ্যমে শেষ হয়: মার্কেটিং গ্রাহকমুখী হয়। এই জন্য এক জন মার্কেটার হিসেবে গ্রাহক কী চান তা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ।